কম মজুরি পাওয়ার শঙ্কায় ১৬% পোশাকশ্রমিক
কম মজুরি পাওয়ার শঙ্কায় ১৬% পোশাকশ্রমিক
পোশাক খাতের ১৬ শতাংশ শ্রমিকের আশঙ্কা, আগামী দিনে তাঁদের মজুরি কমে যাবে। যদিও ৬৩ শতাংশ শ্রমিকের ধারণা, তাঁরা এখনকার মতো একই ধরনের মজুরি পাবেন। আর ১৯ শতাংশ শ্রমিক ভবিষ্যতে কী পরিমাণ মজুরি পাবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচুনিটিসের (এমএফও) যৌথভাবে পরিচালিত ‘গার্মেন্টস ওয়ার্কার ডায়েরিজ’ শীর্ষক ধারাবাহিক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
সানেম ও এমএফও গত বছরের এপ্রিল থেকে প্রতি মাসে চট্টগ্রাম, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের পোশাকশ্রমিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে। গত ৬ আগস্ট ১ হাজার ২৭৮ জন শ্রমিক মুঠোফোনে পরিচালিত জরিপে অংশ নেন। তার মধ্যে তিন-চতুর্থাংশের বেশি নারী শ্রমিক।
পোশাকশ্রমিকদের মধ্যে যাঁরা আগামী দিনগুলোতে কম মজুরি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন, তাঁদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ মনে করেন, করোনাভাইরাস ও বিধিনিষেধের কারণেই মজুরি কমবে। গত মাসে শ্রমিকেরা যখন এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, তখন করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু, দুই–ই বেশি ছিল। কঠোর বিধিনিষেধও চলমান ছিল। যদিও সারা দেশে বর্তমানে করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী। মৃত্যুহারও কমে আসছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে বিধিনিষেধ নেই।
আগামী দিনে মজুরি কমার আশঙ্কায় থাকা শ্রমিকদের মধ্যে ১৮ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা খাবারের পেছনে ব্যয় কমাবেন। ১৮ শতাংশ শ্রমিক অন্য কোনো উপায় অবলম্বনের কথা বলেছেন। ১৬ শতাংশ শ্রমিক বলেছেন, তাঁরা অন্যান্য ব্যয় কমিয়ে আনবেন।
করোনার সংক্রমণ রোধে পবিত্র ঈদুল আজহার পর কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়। তার মধ্যে ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তখন গণপরিবহন বন্ধ থাকলে শ্রমিকেরা কর্মস্থলে ফিরতে দুর্ভোগের শিকার হন। পরে শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য সীমিত সময়ের জন্য বাস ও লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার।
গত ৬ আগস্ট জরিপে অংশ নেওয়া ৮৩ শতাংশ শ্রমিক জানান, তাঁরা আগের সপ্তাহে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলেন। পুরুষদের তুলনায় নারী শ্রমিকদের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ৮৯ শতাংশ পুরুষ ও ৮১ শতাংশ নারী শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে ছিলেন।
আগস্টের প্রথম সপ্তাহে কর্মস্থলে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের মাস্ক দিয়েছিল। কাজের সময় কারখানায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে তুলনামূলক ইতিবাচক চিত্র পাওয়া গেছে। ৭৭ শতাংশ শ্রমিক জানান, কাজের সময় কারখানায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়েছিল।
জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে সানেম বলছে, পোশাকশ্রমিকেরা তাঁদের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ নিয়ে নিরাপদ বোধ করছেন না। কারখানার মালিকেরা তাঁদের উদ্বেগ কমাতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেননি। ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে শ্রমিকদের। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের উদ্বেগ নিরসনে ও তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। পোশাক খাতের উৎপাদন, রপ্তানি ও সামগ্রিকভাবে পুরো অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কারখানার মালিকপক্ষ, সরকার, নীতিনির্ধারকসহ অন্যদের সম্মিলিতভাবে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও জীবনের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
No comments