ব্র্যান্ডগুলোর অঢেল মুনাফা

 

তৈরি পোশাকশিল্প

ব্র্যান্ডগুলোর অঢেল মুনাফা

১৬ ব্র্যান্ড গত বছরের শেষ ছয় মাসে এক হাজার কোটি ডলার মুনাফা করেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা।

বিএইচআরআরসির গবেষণা

·         আগের বছরের চেয়ে পোশাকের দাম ১২% পর্যন্ত কম দেওয়ার অভিযোগ।

·         মাত্র তিন মাসেই নাইকি ১২৫ কোটি ডলার মুনাফা করেছে।

·         ন্যায্যমূল্যে পোশাক ক্রয় এবং জরুরি সহায়তার জন্য তহবিল গঠনের সুপারিশ।

·         গাজীপুরের তৈরি পোশাক কারখানা স্টাইলক্রাফট লিমিটেডের কয়েক হাজার শ্রমিক গত ডিসেম্বরে বকেয়া মজুরির দাবিতে আন্দোলন করেন। তখন তাঁরা সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসের ৩৫ শতাংশ এবং নভেম্বর মাসের সম্পূর্ণ মজুরি পরিশোধের দাবি জানান।

·         বাংলাদেশের এই কারখানার মতো বকেয়া মজুরি পাওয়ার দাবিতে গত বছর মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, ইথিওপিয়া এসব দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরাও বিক্ষোভ করেছেন। করোনার শুরুর দিকে লকডাউনে ব্যবসায় মন্দা দেখিয়ে বিদেশি ক্রেতারা অপ্রত্যাশিতভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল স্থগিত করার পাশাপাশি সময়মতো অর্থ দেননি। যে কারণে বিভিন্ন দেশের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের হাজার হাজার পোশাকশ্রমিককে আংশিক মজুরি দিয়েছে। এমনকি মজুরি না দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অথচ যেসব ব্র্যান্ড ক্রেতা প্রতিষ্ঠান পোশাক নিয়েছিল, তারা বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ঠিকই মুনাফা করেছে। এমন ১৬টি ব্র্যান্ড ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেয়েছে বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস রিসোর্স সেন্টার (বিএইচআরআরসি)

·         বিএইচআরআরসির এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ১৬টি ব্র্যান্ড ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে পোশাক সরবরাহকারী আট কারখানারহাজার ৮৪৩ জন শ্রমিকের মজুরিছিনতাইহয়েছে। এর মধ্যে সাত কারখানার শ্রমিকেরা তাঁদের বকেয়া বেতন-ভাতা পুরোটা পাননি। সরবরাহকারী কারখানাগুলো থেকে পোশাক নেওয়া ওই ১৬ ব্র্যান্ড ক্রেতা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে কারর্টাস ইনকরপোরেট, হ্যানসব্র্যান্ডস, এইচঅ্যান্ডএম, লেভি স্ট্রস অ্যান্ড কো, লিডল, এল ব্র্যান্ডস, ম্যাটালান, মার্কস, নেক্সট, নিউ লুক, নাইকি, পিভিএইচ, রিভার আইসল্যান্ড, সেইনসবারিস, এস অলিভার দ্য চিলড্রেন্স প্যালেস। তারা গত বছরের শেষ ছয় মাসে কমপক্ষে এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার মুনাফা করেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকার সমান। এর মধ্যে গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে নাইকি একাই মুনাফা করেছে ১২৫ কোটি ডলার।




·         গবেষণা প্রতিবেদনে করোনাকালকে ব্র্যান্ড ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভজনক এবং সরবরাহকারী

·         শ্রমিকদের জন্য লোকসানি বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ রোধে গত বছরের শুরুর দিকে দুনিয়াজুড়ে লকডাউন জারি হলে বিদেশি ব্র্যান্ড ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লোকসান আর্থিক দায় কমাতে ক্রয়াদেশ বাতিল, স্থগিত, অর্থ পরিশোধে বিলম্ব এবং অনেক ক্ষেত্রে মূল্যছাড় দাবি করে। সব মিলিয়ে গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত হাজার ৬০০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল করে বিদেশি ব্র্যান্ড ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। সেটির প্রভাব এসে পড়ে শ্রমিকদের ওপর।

·         পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বিএইচআরআরসি কোভিড-১৯ অ্যাপারেল ট্রেকার চালু করেছিল। তার মাধ্যমে ক্রেতারা শ্রমিকদের দায়দায়িত্ব কতটা নিচ্ছে, সেটি প্রকাশ করা হয়। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোও ক্রেতাদের চাপ দিতে থাকে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গ্যাপ প্রাইমার্ক পোশাকের সম্পূর্ণ দম পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে ওয়ালমার্ট আর্কেডিয়া গ্রুপ কোনো ধরনের দায়দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে।

·         বিএইচআরআরসির গবেষণা প্রতিবেদনে আটটি কারখানার ঘটনা উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে

·         উল্লেখযোগ্য একটি হলো বাংলাদেশের স্টাইলক্রাফট। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম, নেক্সট, নিউ লুক রিভার আইসল্যান্ডের পোশাক তৈরির কাজ করে। চারটি ব্র্যান্ড বিএইচআরআরসিকে জানিয়েছে, তারা শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে যৌথভাবে কাজ করছে। অবশ্য কারখানার শ্রমিকেরা তাঁদের বকেয়া পাওনার পুরোটা বুঝে পাননি। একইভাবে কম্বোডিয়ার তিনটি ফিলিপাইনসের একটি কারখানার শ্রমিকেরা বকেয়া মজুরির সবটা পাননি। মিয়ানমারের ইয়ং ক্লথিংয়ের শ্রমিকেরা পুরো পাওনা বুঝে পেয়েছেন। ইথিওপিয়ার একটি কারখানার শ্রমিকেরা বকেয়া মজুরির কিছুই পাননি।

·         গবেষণায় উঠে এসেছে, করোনাকালে ১০ হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। এই শ্রমিকদের প্রতি চারজনের মধ্যে একজনই আইনগতভাবে ন্যায্য পাওনা বুঝে পাননি। ৭৭ শতাংশ শ্রমিকই বা তাঁদের পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মজুরি কর্তন বা কারখানা বন্ধ হওয়ায় অমানবিক অবস্থার মধ্যে পড়েন। অন্যদিকে করোনা সংকটের মধ্যে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অন্যায্য সুবিধা আদায়ে ব্যস্ত ছিল ব্র্যান্ডগুলো। তারা এক বছর আগে পোশাকের যে দাম দিত, সে তুলনায় ২০২০ মালে ১২ শতাংশ পর্যন্ত কম দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পোশাক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

পোশাকের ব্র্যান্ড ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো পোশাকশ্রমিকদের সরাসরি মজুরি দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত নয়। তবে সব সময়ই তারা সস্তায় পোশাক উৎপাদনের জন্য নতুন নতুন গন্তব্য খোঁজে। বর্তমানে পিভিএইচ, এইচঅ্যান্ডএম প্রাইমার্ক তাদের পোশাক উৎপাদন ইথিওপিয়ায় সরিয়ে নিচ্ছে। দেশটিতে মাসিক ন্যূনতম মজুরি মাত্র ২৬ ডলার। তাতে ঘণ্টায় মজুরি দাঁড়ায় মাত্র ১২ সেন্ট।

 

No comments

Theme images by Jason Morrow. Powered by Blogger.