করোনা পরবর্তী ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানী সম্ভাবনা। প্রস্তাবনা -১৫
করোনা পরবর্তী ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানী সম্ভাবনা। প্রস্তাবনা -১৫
একদিন ভিয়েলাটেক্সের চেয়ারম্যান ডেভিড হাসনাত সাহেবকে প্রশ্ন করেছিলাম ১০০ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসাকে যদি ১৫০ মিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে চাই, সর্ব প্রথম কোন কাজটা করতে হবে ? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, স্যাটিস্ফায়েড কাস্টমার হল রেভিনিউ বাড়ানোর প্রথম শর্ত।
সঠিক সময়ে কোয়ালিটি গুডস ডেলিভারী নিশ্চিত করেন, আপনার কাস্টমার আপনাকে বেশি অর্ডার দেয়ার জন্য আপনার পিছনে ঘুরবে। স্যারের কথাটার নিগূঢ় তত্ত্ব কিন্তু আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। পুরো দেশ জুড়ে আমরা যদি কাস্টমার স্যাটিসফেকশনের উপর জোর দেই তাহলে আমাদের নতুন অর্ডারের অভাব হবেনা। দেশের রপ্তানি বেড়ে যাবে।
একজন পাইলট সদা সর্বদা বিপদের ঝুঁকি নিয়েই কিন্তু সকল ঝড় ঝাঁপটার দারুণ মোকাবিলা করেন। একটা পরীক্ষিত ও প্রমানিত চেকলিষ্ট ব্যবহার করে তারা এতগুলো প্রাণ রক্ষা করে চলে।
আজকের আমাদের আলোচ্য বিষয় হলো " অসন্তুষ্ট কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট " এই বিষয়ে একটা চেকলিষ্ট অবশ্য আছে। চলুন দেখে নেই আমরা ও হয়ত এই লিষ্টের অনেক গুলো কাজ করে থাকি।
১। প্রথম যিনি কোন কমপ্লেইন শুনবেন বা মেইল টা পাবেন তাকেই সাথে সাথে ওই সমস্যা টার ওনারশিপ গ্রহণ করতে হবে।
২। কোন মেইল দিয়ে, হোয়াটস্যাপ ম্যাসেজ দিয়ে এই দায়িত্ব ভার বস কে জানিয়ে দিলাম বলেই দায়িত্ব এড়ানোর কাজটা কোনমতেই করা যাবেনা।
৩। কিন্তু টিম মেম্বার সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়ে দিয়ে, দ্রুততার সাথে পরবর্তী করণীয় নিশ্চিত করবেন।
৪। কমপ্লেইন মেইল টা পাওয়া মাত্র , ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে জানিয়ে দিন আপনি কমপ্লেইন টা দেখেছেন এই মাত্র, আপনি যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের কথা বলে তার কাছে আবার ফিরে আসছেন।
৫। দ্বিতীয় একটা বিষয় নিশ্চিত করতে হবে , আপনি কি বুঝেছেন তার কমপ্লেইন মেইলটা থেকে তা আর একবার জিজ্ঞাসা করে নিবেন।
৬। কমপ্লেইন টা যত ছোটই হোক , যতই নগণ্য হোক , বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করুন। নোট গ্রহণ করুন। এবং তাকে বোঝাইতে হবে আপনি তার স্বার্থ সংরক্ষণ করছেন। আপনি তার দলের লোক। ডিটেইলস জিজ্ঞাসা করাতেই অনেকেই মনস্তাত্ত্বিক ভাবে পজিটিভ আচরণ শুরু করে দিবেন। এই পর্যায়েই সমস্যা দূরীভূত হয়েও যেতে পারে।
৭। সহানুভূতি প্রকাশ করুন। আপনার আচরণে, ভাষায়, লিখনিতে এই ঘটনার জন্য কি পরিমান ভোগান্তি হচ্ছে তা অকপটে স্বীকার করে নেবেন। আপনার স্বীকারোক্তি তাকে আপনার প্রতি সহানূভুতিশীল করে তুলবে অবশ্যই।
৮। তাকে শুরুতেই কোন কিছুতেই বাঁধা দিবেন না। আপনি যে একজন ভালো শ্রোতা তা তাকে বুঝতেই হবে। আপনি যে তার সকল কিছুর ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নশীল তা তাকে উপলব্ধি করতে দিন।
৯। পুরো ব্যাপার টা আপনার বোধগম্য হলে , উনি এখন কি চাইছেন তা শুনুন। এই ব্যাপারে ওনার পরামর্শ কি তা ভাল ভাবে বোঝার চেষ্টা করুন।
১০। প্রতিশ্রুতি প্রদান করুন। একটা নিদৃষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে আপনার কাস্টমার কে আশ্বস্ত করুন আগামী একদিন / দুই দিনের ভিতর আপনি কি কি সমাধান করতে সক্ষম হবেন। যতটুকু পারবেন ঠিক ততটুকু বলুন। যা পারবেন না তাও বিনয়ের সাথে বলে রাখুন।
১১। ফলোআপ পাঠান সময় মত। আপনি যে তার এই বিষয় টা নিয়ে কাজ করছেন তা খুঁটিনাটি তাকে জানাবেন। কোন কোন কাজ টা এখনো করতে পারছেন না তাও তাদের জানান।
১২। পোকা-ইয়োক পদ্ধতির নিয়ম কানুন গুলো শিখে নেন খুব জলদি। ভবিষ্যতে এই সকল সমস্যা যাতে আর না হয় তার জন্য যা কিছু করণীয় তা নিশ্চিত করুন।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস উপরোক্ত এই সিম্পল নিয়ম কানুন গুলো মেনে নিয়ে কিন্তু আপনি অনেকদিন এই ক্রেতাদের সাথে বিশ্বাস করে আসছেন। আমি একটু জ্ঞানের বহর দেখাতে একটু পান্ডিত্য জাহির করে ফেললাম।
আর একটা প্রশ্ন জাগতে পারে মাথা নিচু করে সব কিছু মেনে নেয়ার কথাটা অনেকের ধাতে সইবেনা। আমার পরামর্শ হল আপাতত মেনে নেন, পরে যখন সময় সুযোগ আসবে তাকে জানিয়ে দিতে পারবেন, তার কি কি ভুল ছিল। উনি মেনে নেবেন অবশ্যই।
No comments